ফেনীর খাজা আহাম্মদ লেক দখল
ফেনী শহরের ঐতিহ্যবাহী খাজা আহাম্মদ লেক ও সড়ক বিভাগের প্রায় সাড়ে ১২ একর জমি জবরদখল করে মাটি ভরাট করছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। এতে যান চলাচলের রাস্তা সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে পড়ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও। এ ছাড়া লেক ভরাটের ফলে শহরটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর সঙ্গে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরসহ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীও জড়িত।
জেলা এসিল্যান্ড অফিস জানায়, ১৯৭৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাংসদ মরহুম খাজা আহাম্মদ ফেনী শহরের শোভাবর্ধন, প্রাতঃভ্রমণ, কৃষি উৎপাদন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ট্রাংক রোডের দুই পাশে দাউদপুর পুল থেকে লালপুল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার আয়তনের দুটি লেক খনন করেন। পরে ১৯৯৯ সালের ১০ মে তৎকালীন জেলা প্রশাসক একে খাজা আহাম্মদ লেক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।
ভূমি জরিপ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, লেকের ভূমির বর্তমান মূল্য প্রায় পৌনে দুইশ কোটি টাকা।
ফেনীর এসিল্যান্ড রাসেলুল কাদের জানান, গত ঈদের লম্বা ছুটির সুযোগ নিয়ে একটি চক্র লেকের পূর্ব অংশ ভরাট শুরু করে। প্রতিদিন ৫০-৬০টি ট্রাকে করে এখানে মাটি ফেলা হয়। এ খবরে তাৎক্ষণিক ভূমি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দিলে ভরাট কাজে তদারক করা ৫০-৬০ জন তাদের ওপর চড়াও হয় এবং ভয়ভীতি দেখায়। এসিল্যান্ড আরও জানান, তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পৌর মেয়রকে জানান। তবে মেয়র এর সঙ্গে জড়িত নন বলে জানিয়ে দেন। পরে প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা গোলাম রসুলসহ দু’জনের নামে নোটিশ জারি করে।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগেও একই কায়দায় লেকের পশ্চিম অংশ ভরাট করে ৩৬৫টি আধাপাকা দোকানঘর নির্মাণ করে একটি মহল। প্রতিটি দোকান ৭ লাখ টাকা করে বিক্রি করে তারা। পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মানিক দোকানঘর বিক্রির দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাউন্সিলর মানিক দোকানপ্রতি ৭ লাখ টাকা নিয়ে তাদের ২ লাখ টাকার প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দিচ্ছেন।
এর আগে লেক দখল ও ভরাটের বিরুদ্ধে পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সাখাওয়াত হোসেন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করলে আদালত কাজ বন্ধ রাখা ও লেককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রশাসন ত্বরিত কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপরও আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে লেক ভরাট করছে প্রভাবশালী মহলটি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান বলেন, ফেনী শহরের সৌন্দর্য ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাজা আহাম্মদ লেক অত্যন্ত জরুরি। অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা থেকে শহরকে রক্ষা করছে লেকটি। একটি মহল লেক ভরাটের জন্য মাটি ফেলেছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কোনো মূল্যে লেকটি রক্ষা করা হবে বলে তিনি জানান।
পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজি আলাউদ্দিন সমকালকে জানান, তারা ট্রাকস্ট্যান্ডের জন্য কিছু মাটি ভরাট করেছেন। এ ছাড়া স্ট্যান্ডের সুবিধার জন্য দোকান তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য পৌর সভার কাছে লিজ আবেদন করা হয়েছে।
-শাহজালাল রতন