লক্ষ্মীপুরের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে নতুন ধারার প্রবর্তক, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ লক্ষ্মীপুরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান সৃষ্টিকারী চৌকস ও স্মার্ট সচিব মোঃ ইসমাইল জবিউল্লাহ

বাংলাদেশ জনপ্রশাসনের এক উজ্জ্বল তারকা জনাব ইসমাইল জবিউল্লাহ; যিনি চৌকস ও স্মার্ট সচিব হিসেবে সুপরিচিত। দীর্ঘ কর্মকালে যেখানেই কাজ করেছেন, সেখানেই ঈর্ষণীয় প্রতিভার স্বাক্ষর ও পদচিহ্ন রেখেছেন। লক্ষ্মীপুর জেলার গৌরব জনাব ইসমাইল জবিউল্লাহ স্বীয় গুণবলে জাতীয় দিগন্তে ভাস্বর হয়ে আছেন। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত এই প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব সমাজসেবায়ও অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ।
ইসমাইল জবিউল্লাহ তদানীন্তন নোয়াখালী জেলার রামগতি থানাধীন শান্তিরহাট মোক্তারবাড়ি তাঁর নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা স্বনামধন্য শিক্ষক মরহুম সুজাউদ্দিন আহমেদ ছিলেন লক্ষ্মীপুর সামাদ একাডেমীর শিক্ষক। পিতামাতার তৃতীয় সন্তান ইসমাইল জবিউল্লাহ অত্যন্ত মেধাবী হিসেবে ছাত্র-জীবনেই সুপরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি লক্ষ্মীপুর সামাদ একাডেমী থেকে ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বাদশ এবং ১৯৬৭ সালে লক্ষ্মীপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে ইংরেজিতে অনার্স ও ১৯৭৩ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি এবং জাপানের এডিবি ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল ছাত্র-সংসদের সাংসদ নির্বাচিত হন। ছাত্র-জীবন থেকে বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ঐ সময়ে তাঁর সম্পাদনায় একুশে ফেব্রুয়ারি ও অন্যান্য জাতীয় দিবসে স্মরণিকা প্রকাশিত হয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে লক্ষ্মীপুরে আলোড়ন সৃষ্টিকারী শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ত্রিধারা’ এর তিনি ছিলেন ফাউন্ডার জেনারেল সেক্রেটারি। ঐসময়ে তিনি সমমনাদেরকে সংগঠিত করে ‘ত্রিধারা শিশু নিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা লক্ষ্মীপুর জেলার প্রথম ভিন্নধর্মী কিন্ডারগার্টেন স্কুল। ঐ সময়ে লক্ষ্মীপুরে নাটক, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা, নজরুল-রবীন্দ্র-সুকান্ত জন্মজয়ন্তী, বর্ষবরণ, জাতীয় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। লক্ষ্মীপুরের সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, চৌধুরী খোরশেদ আলমসহ বিশিষ্টজনদের সাহাচর্য এবং ননী গোপাল ঘোষ, রবি দা, ফারুকীদের নিয়ে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতে জনাব জবিউল্লাহর ছিল বলিষ্ঠ পদচারণা।
জনাব জবিউল্লাহ ১৯৭৩ সালে চৌমুহনি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ঐ সময় তিনি চন্দ্রগঞ্জ কফিলউদ্দিন কলেজের খন্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ইংরেজির সুযোগ্য অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষার আলোকবর্তিকা জনাব জবিউল্লাহ অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর সুযোগ্য ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অতিমর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। স্বাধীনতা উত্তর বৃহত্তর নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার কিশোর, যুবসমাজ, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সমাজসেবী ও পেশাজীবী তথা সুধীকূলের নিকট ইসমাইল জবিউল্লাহ ছিল একটি অতি সুপরিচিত নাম।
স্বাধীনতা উত্তর প্রথম রেগুলার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৭৭ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়ে টানা ৫ বছর তিনি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ জনপ্রশাসন ক্যাডারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জনাব জবিউল্লাহ ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। চাকরি জীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই সময়ে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত থেকে অতীব আন্তরিকতার সাথে তিনি সমাজ, দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। দীর্ঘ চাকরিজীবনে অসাধারণ মেধা, দক্ষতা, ধীশক্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষিপ্রতা, ডায়নামিজম ও অভিজ্ঞতার কারণে তিনি একজন চৌকস ও প্রাজ্ঞ সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন।
ঢাকার মেট্রাপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বকালে বিচারপ্রার্থী ও আইনজ্ঞ মহলে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ঢাকার বিশেষ ট্রাইবুন্যালে ম্যাজিস্ট্রেট ও ঢাকার বিশেষ সামরিক আইন-আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে অতি সুনামের সাথে যোগাযোগমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালীন তিনি কর্মদক্ষতা, মননশীলতা ও সৃজনশীলতার অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মিরপুর অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উপ-সচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যুগ্মসচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশন এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে অবদান রেখেছেন। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সাহায্যপুষ্ট ‘প্রমোট’ প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশের নারী-শিক্ষার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এর সচিব এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বল্প সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতির সচিব নিয়োজিত ছিলেন।
জনাব জবিউল্লাহ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল) ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপিং কোম্পানি (আইএফএফসি) এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক এর ডাইরেক্টর এবং মহাখালীস্থ আইসিডিডিআরবি এর বোর্ড অব গভর্নর্স এর গভর্নর ছিলেন। তাছাড়া আগারগাঁওয়ে অবস্থিত আইডিবি ভবনের মোতাওয়াল্লী কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন।