লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাটকে নদীবন্দর ঘোষণা
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘকালের দাবি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাধীন মজু চৌধুরীর হাটকে নদীবন্দর ঘোষণা করা হয়। অবশেষে বর্তমান সরকার জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবিটি পূরণ করল। সম্প্রতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এর টি এ শাখা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয় এসআরও নং ০৯ আইন/২০১৭ দি পোর্টস এক্ট ১৯০৮ এর সেকশান নং ৭ এর (১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরীটি (বিআইডব্লিউটিএ) কে মজু চৌধুরী হাট নদীবন্দর এর সংরক্ষক হিসেবে এতদ্বারা নিযুক্ত করিল। এ সুসংবাদ নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান মজু চৌধুরী হাটে সম্প্রতি পথসভার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সাথে মতবিনিময়কালে সরকারের পক্ষে মজু চৌধুরী হাট নদীবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। নদীবন্দর ঘোষণার এ সংবাদটি মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শুধু লক্ষ্মীপুর জেলা নয়, বরিশাল-খুলনা-চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রায় ১০ কোটি মানুষের মাঝে আনন্দ বয়ে এনেছে।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমান বলেন, দীর্ঘকালের অবহেলিত লক্ষ্মীপুর আজ উন্নয়নে ভরে যাবে। মজু চৌধুরীর হাটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদীবন্দর চালু হবে, এটি নিশ্চিত হলো। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় শতাধিক কোটি টাকা ব্যয় হবে এটি বাস্তবায়নে; শীঘ্রই টেন্ডার হবে, অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, এ নদী বন্দরটি অন্যান্য বন্দরের চেয়েও অত্যাধুনিক হবে। চট্টগ্রাম-সিলেট-বরিশাল ও খুলনা বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে পূর্বাঞ্চলের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, এ অঞ্চলের ৫০ বছরের দাবি পূরণ হলো। এ নদীবন্দর স্থাপনের দাবি নিয়ে লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন সময়ে সমাবেশ মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দিয়েছিলো। অতীতের কোনো সরকার এ দাবিটি পূরণ করতে পারেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ এ নদী বন্দর ঘোষণা। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের হাজার হাজার মানুষ এ নদী পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গত ৫০ বছর যাবত চলাচল করে আসছে। এখন আর সেই ঝুঁকি থাকবে না। নিরাপদেই চলাচল করবে মানুষ। তিনি আরো বলেন, গত ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল সড়কটি পাকা করেছে। এখন নদীবন্দর ঘোষণা করেছে। এর ফলে বড় বড় লঞ্চ, জাহাজ চলাচল করবে। পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হবে। উপকূলীয় জনপদের মানুষের উন্নয়ন ঘটবে। বেকারত্ব দূর হবে। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটবে। তিনি দ্রুত লক্ষ্মীপুরকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে পূর্বাঞ্চলের একমাত্র দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাট। গত ৫০ বছর যাবত এসব অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ফেরী ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় এ পথে চলাচল করে আসছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে যেতে ঢাকা হয়ে ১শ’ দেড়শ’ কিঃমিঃ ঘুরে আসতে হতো। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পথে আসা-যাওয়া করত। নৌকা ও ট্রলার ডুবিতে বহুমানুষ হতাহত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাট মেঘনা নদী ঘাটে নদীবন্দর ঘোষণার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বহু আন্দোলন করলেও অতীতের কোনো সরকার এ দাবির সমর্থনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। শুধু আশ্বাসের বাণী দিয়ে শেষ করেছে তাদের ক্ষমতাকাল।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজু চৌধুরী হাট সংলগ্ন স্থানের সঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, পটুয়াখালী পায়রা বন্দর এবং চাঁদপুর নদীবন্দরের সঙ্গে সড়কপথ ও জলপথের সংযোগ রয়েছে। এছাড়া এ জেলায় সস্তা শ্রমবাজারসহ মজু চৌধুরী হাট সংলগ্ন স্থানে বৃহৎ পরিসরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে।
এ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ গত ফেব্রুয়ারি ২০১৬ প্রথম পক্ষের পাক্ষিক সভায় লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলাধীন মজু চৌধুরী হাট সংলগ্ন স্থানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ২১ মার্চ ২০১৬ তারিখে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসককে প্রস্তাবিত স্থানের জমির তথ্যাদিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রেরণ করার পর গত ৫ জুন ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্মীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য পূনরায় স্থান নির্চাচন করে প্রস্তাব দেয়ার অনুরোধ জানান। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
নদীবন্দর ঘোষণার পাশাপাশি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করা হলে এ অঞ্চলে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটবে, বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। লক্ষ্মীপুরের অ-লক্ষ্মী দূর হবে মনে করছেন এ জেলার চার সংসদ সদস্য।