Sun Mercury Venus Ve Ves
বিশেষ খবর
‘লক্ষী’ থেকে লক্ষীপুর, যার আরেক নাম সয়াল্যান্ড  লক্ষীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা  ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ  আ’লীগ আবারও ভোট চুরির পরিকল্পনা করছে - লক্ষীপুরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে বাংলাদেশে দিবাস্বপ্ন দেখার কোনো কারণ নেই - লক্ষীপুরে মাহবুব উল আলম হানিফ 

নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সীমানা বিরোধে হামলা-লুট ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর মধ্যে সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে সীমান্তবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রামগতির চরগাজী ইউনিয়ন ও হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ সীমান্তবর্তী বয়ারচর এলাকা নিয়ে এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দু’পক্ষের দুইদিকে অবস্থান শক্তিশালী করতে বিশেষ সন্ত্রাসী বাহিনীদের ব্যবহার করাসহ তাদের মহড়ায় নির্ঘুম রাত্রিযাপন করছেন দুই দিকের মানুষ। রাত জেগে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন অনেকে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও বহু প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। রামগতির বাসিন্দারা জানান, ১৯৩৫ সাল থেকে বয়ারচর এলাকাসহ দক্ষিণে মেঘনা নদীর ১০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত রামগতি উপজেলার ভূখন্ড ছিল। হঠাৎ ২০০৬ সালে বয়ারচরকে হাতিয়া উপজেলার দাবি করে হাতিয়ার জনগণ। ২০০৭ সালের ভোটার তালিকায় বয়ারচরের চরগাজী, চরলক্ষ্মী, চর দরবেশ, চর দক্ষিণ টুমচর, চর শুশিলা ও চর জয়লামসহ ৬টি মৌজার মানুষ রামগতি উপজেলার চর গাজী ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ভোটার হন। তার আগেও ১৯৯১, ৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে ওই এলাকার ভোটাররা অংশ নেন। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর বয়ারচরে হাতিয়া উপজেলা থেকে নতুন করে ভোটার করতে এলে স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দেয়। স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে হাতিয়া উপজেলা থেকে ভোটার করতে আসা লোকজন ফিরে যেতে বাধ্য হন। এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাতিয়া ও রামগতির বাসিন্দারা। এখনো পর্যন্ত সে উত্তাপ থামেনি। সীমানা বিরোধও মীমাংসা হয়নি আজো। এ সুযোগে একটি বিশেষ বাহিনী প্রতিনিয়ত ওই এলাকার সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করছে। একই সঙ্গে নারীদেরও নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রামগতির বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও তার অনুসারীরা প্রায়ই রামগতির অংশে এসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে একটি অস্ত্রধারী টাউজার বাহিনী গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সম্প্রতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর গ্রামে হাতিয়ার একদল সন্ত্রাসী (টাউজার বাহিনী) বাড়িঘরে হামলা চালায়। শেখ ফরিদ, সোলায়মান, নুর জামাল, বাবর শিকদার, মোঃ শাহজাহান, নেছার মুন্সি, জসিম উদ্দিন, মিলন ও নিজাম উদ্দিনের বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে তারা। এসময় আসবাবপত্রসহ মালামাল তছনছ করা হয়। তাদের কয়েকটি গরুও নিয়ে যায় হামলাকারীরা। বাধা দিতে গেলে নারীসহ আটজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
জানতে চাইলে হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন- কোনো সন্ত্রাসী বাহিনীকে তিনি লালন করেন না, সীমানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই, টাংকির চর ও তার পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার এরিয়া আদালতের রায়ে হাতিয়ার। এখানে রামগতির নেতৃবৃন্দ পেশাদার সন্ত্রাসীদের কাছে নির্বিকার হয়ে আছে। আর এ সুযোগে বেশ কয়েকটি মামলার আসামী ফরিদসহ সন্ত্রাসীরা তাদের সুবিধা লুটে নিচ্ছেন। এদিকে স্থানীয় হরনী এলাকার মাইন উদ্দিন বাজার এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে রামগতির সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনের শেল্টারে স্থানীয় চরগাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন তার আধিপত্য বিস্তার করছে। আর তার বাহিনীতে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ফরিদ কমান্ডার ও সোলায়মান বাহিনীকে যোগ করে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করছেন। প্রতিনিয়ত রাতের অন্ধকারে ওইসব বাহিনী বিভিন্ন বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে গরু, ছাগল ও ঘরের আসবাবপত্র লুটসহ নারীদের নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এ নিয়ে ৩ জানুয়ারি সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ করেন হরনী এলাকার বাসিন্দারা। রাত জেগে সন্ত্রাসীদের পাহারা দেয়ার আহবান জানান সমাবেশের আয়োজকরা।
জানতে চাইলে চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের শেল্টার দেয়ার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সুমন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, চরগাজী ইউনিয়নের টাংকির বাজারের মাছ ঘাটটি বৃহত্তর নোয়াখালীর সবচেয়ে বড় মাছ ঘাট। এখানে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়, যা আগে হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী জোরপূর্বক তার সন্ত্রাসী দিয়ে ভোগ করত। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তারা এখন আর পারে না, এখন তার আধিপত্য বিস্তারের জন্য রামগতির বয়ারচরকে হাতিয়ার দাবি করে তা দখল করতে তার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমার পক্ষ থেকে শেল্টার দেয়া হচ্ছে না; ভিকটিম কারো যদি ব্যক্তিগত কোনো মামলা থাকে সেটাতো তার ব্যাপার। এখন যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারাই প্রতিরোধ করছে। আদালতের আদেশ হচ্ছে যে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে, তাহলে হাতিয়ার লোকজন রামগতিতে এসে নিরীহ মানুষদের উপর অত্যাচার নির্যাতন কেন করছেন তা বোধগম্য নয়।
-জাহাঙ্গীর লিটন