জন্মস্থানকে ভুলতে পারিনি বলে জনকল্যাণের বিরাট দায়িত্ব
নিয়ে ফিরে এসেছি লক্ষ্মীপুরে
-লক্ষ্মীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান
বৃহত্তর নোয়াখালীর কৃতী সন্তানরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। তাঁরা মেধা ও মননের সাথে সংযোগ করেছেন ডায়নামিক কর্মস্পৃহা। এভাবে তাঁরা সমাজ প্রগতিতে রেখে চলেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। প্রতিভার বিচ্ছুরণে তাঁরা যেমন নিজেদের আলোকিত করেছেন, তেমনি বৃহত্তর নোয়াখালীকেও করেছেন গৌরবান্বিত। লক্ষ্মীপুর জেলার এমনই এক কৃতী সন্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ নোমান; যিনি পরোপকারী, সৎ, বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল হিসেবে সুপরিচিত। বর্তমানে তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। সম্প্রতি তাঁর সাথে লক্ষ্মীপুর বার্তা পত্রিকার প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন। তাঁদের আলাপচারিতার উল্লেখযাগ্য অংশ লক্ষ্মীপুর বার্তা’র সহকারী সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে এখানে সন্নিবেশিত হলো।
জন্মভূমি ও
জন্মস্থানের স্মৃতি মানুষের মনকে আবেগতাড়িত করে, জন্মভূমি লক্ষ্মীপুর সম্পর্কে আপনার অনুভূতির
কথা বলবেন কী এমন প্রশ্নের জবাবে লক্ষ্মীপুরের সুসন্তান, তরুণ রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী এম নোমান বলেন যে মাটিতে জন্ম,
যার আলো-বাতাসে বড় হয়েছি,
কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে
এসে একদিন আমাকে চিরকালের জন্য শায়িত করা হবে যেখানে সেই জন্মভূমি তথা জন্মস্থানের
কথা প্রতিনিয়তই স্মরণ করতাম। জন্মভূমিকে ভুলতে পারিনি বলেই জনকল্যাণের বিরাট
দায়িত্ব নিয়ে লক্ষ্মীপুরের মাটিতে ফিরে এসেছি।
শৈশব-কৈশোরে
লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রিক কোনো স্মৃতি মনে পড়ে কি, যা আজও আপনার মনকে দোলা দেয় এমন প্রশ্নের জবাবে
এককালের প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রনেতা, বর্তমানে
তারুণ্যদীপ্ত জননেতা মোহাম্মদ নোমান জানান, শৈশব-কৈশোরের অনেক কথাই মনে পড়ে। আমরা ঘুড়ি
উড়াতাম, হাডুডু খেলতাম,
ফুটবল খেলতাম, মনের আনন্দে হৈ-হুল্লোড় করতাম; কিন্তু আমাদের মুরুব্বীরা এগুলো পছন্দ করতেন
না। আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষা করে যাতে আমরা বেড়ে উঠতে পারি, সেজন্য বাইরে মেলামেশা করার ব্যাপারে
অভিভাবকদের সতর্কতা ছিল। আমাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার ব্যাপারে এর যে প্রয়োজন ছিল,
এখন তা বুঝতে পারছি।
আপনি
লক্ষ্মীপুরের জনকল্যাণে নিবেদিত রয়েছেন। আপনার এলাকার প্রধান সমস্যা কী, এর সমাধানের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন এমন
প্রশ্নের জবাবে দূরদর্শী, আশাবাদী জননেতা
মোহাম্মদ নোমান বলেন আমার এলাকার সমস্যা অনেক। প্রথমতঃ আমার নির্বাচনী এলাকায় গ্যাস একটি বড়
সমস্যা। আপাতত গ্যাসের নতুন সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত হলে
আশা করি, আমাদের চাহিদা
প্রথম দিকে পূরণ হবে। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ সমস্যা। বিদ্যুতের অভাবে শিক্ষার্থীদের
লেখাপড়ায় বিঘœ হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,
মসজিদে মুসল্লীদের নামাজ
আদায় কষ্টকর হচ্ছে। তবে আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মিত
হচ্ছে দ্রুতগতিতে, আগামী মাসে এর
উদ্বোধন হবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস না থাকায় এলাকার মানুষ জান-মালের ঝুঁকির মধ্যে
থাকে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় এলাকার মানুষ অতীতে আগুনের লেলিহান শিখায়
নিজেদের সম্পদ ভস্মীভূত হতে দেখেছে। দূরবর্তী স্থান থেকে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের
সম্পদ রক্ষা করতে পারেনি। শীর্ঘই তাদের দীর্ঘদিনের এ সমস্যা দূর হবে।
রাস্তাঘাট একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এর
উন্নয়নে আমি অগ্রাধিকার দেব। এছাড়াও অবকাঠামোগত অনেক সমস্যা
আছে, যেগুলোর সমাধানের ব্যাপারে আমি পদক্ষেপ নিয়েছি।
আশা করি, এ সমস্যাগুলোর সমাধানে আমাকে বিশেষ বেগ পেতে
হবে না। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পেশ করে অনেকগুলোতে অনুমোদন লাভেও আমি সমর্থ
হয়েছি। এগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে এলাকার জনগণের মাঝে শান্তি ও স্বস্তি অনেকটা ফিরে
আসবে।
লক্ষ্মীপুরে
নৌ-বন্দর স্থাপনের ব্যাপারে মোহাম্মদ নোমান বলেন, জাতীয় সংসদে
যেদিন আমার বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়েছে, সেদিনই আমি
লক্ষ্মীপুরে নৌ-বন্দর স্থাপনের দাবি করেছি। মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর স্থাপনের
উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ নৌ-বন্দর ভোলা-বরিশাল, চট্টগ্রাম
বিভাগসহ বিরাট অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। এ বিষয়ে মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে নতুন রেলপথ
নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-ফরিদগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর পর্যন্ত বিস্তৃত
করে স্থাপন করা হোক। এ রেলপথ স্থাপিত হলে বৃহত্তর নোয়াখালীসহ ভোলা-বরিশাল অঞ্চলের
২ কোটি মানুষ উপকৃত হবে।
লক্ষ্মীপুরের
শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় বলে মনে করেন এমন
প্রশ্নে এলাকাপ্রেমী জননেতা মোহাম্মদ নোমান এমপি বলেন, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা বেশি। এদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি
উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও কাম্য। তবে এ দু’টো উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এটি করা সম্ভব হলে শিক্ষিত বেকার যুবকদের
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, বিভিন্ন পরিবার সমৃদ্ধ হবে, এলাকার উন্নয়নের কাজও এগিয়ে যাবে।
লক্ষ্মীপুরের
আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা যায়, এজন্য স্থানীয়
জনগণের পাশাপাশি সরকারও কম উদ্বিগ্ন হন না; এমন অবস্থায়
আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতিতে আপনি কী ভূমিকা নিয়েছেন এমন জিজ্ঞাসার জবাবে সচেতন
রাজনীতিবিদ জনপ্রতিনিধি মোহাম্মদ নোমান বলেন, আইন-শৃংখলা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ওপর আমি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত
কয়েকটি সভা-সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় আমি যোগ দিয়েছি, সেখানে বিষয়টির
গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছি। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রেখে জনগণকে
উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, সাধারণ জনগণ, স্থানীয় প্রশাসন মিলে উদ্যোগ নিলে সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন কোনো কঠিন বিষয় নয়।
সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে লক্ষ্মীপুরের একটা বদনাম আছে; আমরা সেই বদনাম ঘুচাতে চাই,
শান্তি-শৃংখলার জনপদ
হিসেবে লক্ষ্মীপুরকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে আমরা
অচিরেই লক্ষ্মীপুরকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব, ইনশাল্লাহ।
লক্ষ্মীপুরের
উন্নয়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করেন কী, করে থাকলে তা
কীভাবে মোকাবেলা করছেন এমন প্রশ্নে দৃঢ়চেতা কল্যাণকামী রাজনীতিক মোহাম্মদ নোমান
বলেন, তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা আমাদের করতে
হচ্ছে না। সরকারি উদ্যোগে যেসব প্রকল্প বা কর্মসূচি ঘোষণা হবে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জনদাবির
প্রেক্ষিতে লক্ষ্মীপুর জেনারেল হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে আমাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা
হয়েছে। একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনও আমাদের কর্মসূচিতে রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো
বাস্তবায়িত হলে লক্ষ্মীপুর উন্নয়নের প্রশস্ত সড়কে পা রাখার সুযোগ পাবে।
সুদীর্ঘ ২৮ বছর
থেকে নিয়মিত প্রকাশিত বৃহত্তর নোয়াখালীর মুখপত্র লক্ষ্মীপুর বার্তা’র মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নোমান বলেন লক্ষ্মীপুর বার্তা’র সম্পাদক এম হেলাল আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল-সংসদে নির্বাচিত
ছাত্রনেতা ছিলেন। সেসময় তিনি লক্ষ্মীপুর বার্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
প্রকাশের উদ্যোগ নেন। আমি তাঁর সে উদ্যোগে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিলাম। সেই
থেকে ২৮ বছর ধরে লক্ষ্মীপুর বার্তা অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর বার্তা
একটি জেলার নাম ধারণ করলেও এটি বৃহত্তর নোয়াখালীর মুখপত্রে পরিণত হয়েছে। বৃহত্তর
নোয়াখালীর যোগাযোগ ও আধুনিকায়নে বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের উন্নয়নে এ পত্রিকার অবদান
অনেক বেশি। লক্ষ্মীপুর তথা বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে
কর্তৃপক্ষের নজরে এনে এর সমাধান লক্ষ্মীপুর বার্তা’র অন্যতম লক্ষ্য।
বৃহত্তর নোয়াখালীর উন্নয়ন-সম্ভাবনা সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে সজাগ করা এবং
এর বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা এ পত্রিকার লক্ষ্য। লক্ষ্মীপুর বার্তা’র মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরবাসী অনেক উপকৃত হয়েছে। লক্ষ্মীপুর বার্তা আগামীতে আরও
উন্নত ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশিত হবে এটি আমার একান্ত প্রত্যাশা।