ফেনীরত্ন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্মরণে

বাংলা ভাষার আধুনিককাল পর্বের অন্যতম নাট্যকার সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব কাস্টমস। মায়ের নাম ফিরোজা খাতুন। সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে তিনি এসএসসি, ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। রাজনৈতিক সমস্যার কারণে পরে করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে কপি রাইটারের পদে যোগদান করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে ‘নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ’ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশের নাট্যশিল্পকে বিশ্বনাট্য ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য তিনি দেশব্যাপী ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর লেখক জীবনের শুরু তদানীন্তন ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে প্রবন্ধ লিখে। শুরুতে তিনি ইতালী, ফ্রান্স, আমেরিকা ও স্প্যানিশ সাহিত্য থেকে গল্প, কবিতা ও চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ অনুবাদ করেন ও সেসব নানা পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। শুরুতে কবিতার প্রতি আগ্রহী হলেও নাটকই হয়ে ওঠে তার সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু। ‘অমৃত উপাখ্যান’ নামে তার একটি উপন্যাসও রয়েছে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক ও নাট্যগ্রন্থঃ সর্পবিষয়ক গল্প ও অন্যান্য নাটক, মুনতাসির ফ্যান্টাসি, শকুন্তলা, কেরামতমঙ্গল, কীর্ত্তনখোলা, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, বনপাংশুল, নিমজ্জন, ধাবমান, পুত্র ইত্যাদি। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানা সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।