লক্ষ্মীপুর বার্তা’র সাথে সাক্ষাৎকারে
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি
কেমন চলছে আপনার ইউনিয়ন পরিষদ -এমন জিজ্ঞাসার জবাবে তারুণ্যদীপ্ত চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম গতিশীলভাবে চলছে। উন্নয়নমূলক কাজকর্মের সাথে এলাকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নে আমরা ভূমিকা রাখছি। ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি মিটিংয়ে আইন-শৃংখলা বিষয়ে আলোচনা হয়, এর অগ্রগতি সম্পর্কে সদস্যগণ আলোচনা করেন। ইউনিয়নের কোনো এলাকায় সমস্যা দেখা দেয়ার সাথে সাথে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। এজন্য ইউনিয়নে শান্তি-শৃংখলা বিরাজ করছে; আমরা ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সময় দিতে পারছি।
আপনার এলাকার ভোটারগণ কোনো সমস্যা নিয়ে আপনার শরণাপন্ন হলে আপনি কীভাবে সমাধান করেন -এমন প্রশ্নের জবাবে সৎসাহসী, জনদরদী চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, আমি প্রত্যেকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য লোকদের সাথে আলোচনা করি এবং সমাধানের একটা পথ বের করি। কেউ আমার কাছ থেকে হতাশ বা বিফল হয়ে ফিরে যায় না।
আপনার ইউনিয়নে প্রধান সমস্যা কী কী এবং সেগুলোর সমাধানে আপনি কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন -এমন প্রশ্নের জবাবে সমাজ সচেতন তরুণ চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, আমার এখানে প্রধান সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা; বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেয়ার ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এলাকার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা এর প্রতিকারে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছি, যেগুলো দিয়ে জমে যাওয়া অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন হতে পারে। এছাড়া মেঘনাপাড় থেকে মতিরহাট পর্যন্ত যে রাস্তা গেছে, তার একস্থানে একটা ব্রিজ নির্মাণ প্রয়োজন; এজন্য আমরা চেষ্টা করছি, যাতে এ ব্রিজ নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন হতে পারে। এছাড়া বেশক’টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি আরও বলেন, আমার ইউনিয়নে আরেকটি সমস্যা হলো- পানীয় জলের সংকট। আমি বিভিন্ন স্থানে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে এলাকার লোকজন আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে পারে। এ ব্যাপারে কাজের কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। আশা করছি, এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে ইউনিয়নের জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য-অবনতির আশংকা দূরীভূত হবে।
আপনার ইউনিয়নের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন -এমন প্রশ্নে এলাকাপ্রেমী জনপ্রিয় চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। যানবাহন চলাচল সচল থাকলে এলাকার যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর তার শুভ প্রতিফলন পড়বে। সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এনজিও ইউনিয়ন পরিষদের সাথে কাজ করে। আমরা তাদের সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা নিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। এর সমাধানের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
লক্ষ্মীপুরের শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় বলে আপনি মনে করেন -এমন প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী তরুণ চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, এলাকায় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে কর্মসংস্থানও বাড়বে। কুটির শিল্পগুলোকে পুনর্গঠিত করা হলে সেগুলোর মাধ্যমেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুর সয়াবিন উৎপাদন এলাকা; দেশের উৎপাদিত মোট সয়াবিনের মধ্যে ৭০ ভাগই আসে লক্ষ্মীপুর থেকে। এজন্য লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন-ভিত্তিক কল-কারখানা গড়ে ওঠা প্রয়োজন এবং এর প্রচুর সম্ভাবনাও রয়েছে। লক্ষ্মীপুরের অনেক কৃতী সন্তান দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে কারখানা স্থাপন করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন; তাঁদেরকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করে এলাকায় দু’একটি কারখানা স্থাপন করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বৃহত্তর নোয়াখালী বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিলে তা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করি। এর ফলে এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারের হারও হ্রাস পাবে।
আপনার এলাকার আইন-শৃংখলা উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি? কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা কীভাবে মোকাবেলা করেন -এমন প্রশ্নে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সাইফুল হাসান রনি বলেন, অত্র এলাকায় আইন-শৃংখলা উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা জনগণের নিরাপত্তা দিতে সমর্থ হয়েছি। ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের আইন-শৃংখলা নিয়ে সরকারের কোনো উদ্বেগ নেই। জনগণ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে -এটি আজ বড় সত্য। তিনি বলেন- শুধু পুলিশের ওপর নির্ভর না করে আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক ও সমাজকর্মী সবার সহযোগিতা নিয়ে আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর দু’একটা সফল কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করবেন কি, যা অন্যদের কাছেও প্রেরণার উৎস হতে পারে -এমন প্রশ্নের জবাবে আত্মপ্রত্যয়ী চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেয়ে আমি ৩টি কালভার্ট নির্মাণ করেছি; যা সড়ক পথে যোগাযোগকে আরও সহজ এবং ফলপ্রসূ করেছে। জনগণ এগুলোর নির্মাণে আমার উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। তারা খুব সন্তুষ্ট এবং কথা প্রসঙ্গে এ কথা বলেছে যে, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের উন্নয়নে আমার মেয়াদকালে তারা আরও কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন আশা করে।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুরের ৪টি উপজেলার মধ্যে সরকার আমাকে নির্বাচিত করেছে। আইসিটি খাতে ২০১৫ সালে উপজেলায় সেরা ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকৃতিলাভ করেছি। মৎস্য চাষে সেরা উদ্যোক্তা নির্বাচিত হয়েছি। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের ম্যানেজার হিসেবে উপজেলায় সেরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জেলার চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। এসব কাজের স্বীকৃতিলাভের পর আমার কাজের গতি ও উদ্যম আরও বেড়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুরে নদী বন্দর স্থাপিত হলে লক্ষ্মীপুরবাসী কতটুকু উপকৃত হবেন -এমন প্রশ্নে সফল চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, নদী বন্দর স্থাপন লক্ষ্মীপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এটি স্থাপিত হলে নৌ-পথে যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে গতিশীলতা আসবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন হবে। লক্ষ্মীপুরবাসী উপকৃত হবে।
ভবানীগঞ্জের সাফল্য সম্পর্কে গর্বিত চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, এখানে কৃষি সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সয়াবিন চাষে আমরা প্রথম স্থানে আছি। কলা ও সব্জি চাষে আমাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ১০ বছর আগেও এমনটি ছিল না। মৎস্য চাষে আমাদের সাফল্য আগেই স্বীকৃত হয়েছে।
আপনার ইউনিয়নের তথ্য-সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণ কতটুকু উপকৃত হচ্ছেন বলে মনে করেন -এমন প্রশ্নের জবাবে জনদরদী চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার সরকারের কল্যাণকর পরিকল্পনার অধীনে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নেই তথ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ কেন্দ্র থেকে আমার ইউনিয়নের জনগণ অনেক সুবিধা ভোগ করছে, স্থানীয় জনগণ এ কেন্দ্রের সেবালাভ করে অনেক উপকৃত। আগে তাদেরকে মহকুমা বা জেলা শহরে গিয়ে এ সেবা নিতে হতো, এখন তারা হাতের কাছেই পেয়ে যাচ্ছে সব তথ্য। এতে তারা দারুণ খুশি।
ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে দূরদর্শী চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, আগামীতে ২টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করব; একটি হলো এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, অন্যটি সড়ক পথের উন্নয়ন। এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ অন্যান্য যে কাজগুলো অসমাপ্ত আছে, সেগুলো সম্পূর্ণ করা আমাদের লক্ষ্য।
বৃহত্তর নোয়াখালী, বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের মানুষের প্রিয় পত্রিকা লক্ষ্মীপুর বার্তা’র মূল্যায়ন প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুরের প্রিয় সন্তান সাইফুল হাসান রনি বলেন, লক্ষ্মীপুর বার্তা’র সাথে আমার পরিচয় ছোটবেলা থেকে। এটি শুধু লক্ষ্মীপুরের নয়, বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষের প্রিয় পত্রিকা। এ পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নোয়াখাইল্যার নালিশ কলামটি আমার খুব প্রিয়; দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। আশা করি, ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। এছাড়াও লক্ষ্মীপুর বার্তা’র মাধ্যমে বৃহত্তর নোয়াখালী, বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয় কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধানের প্রত্যাশায়। প্রশাসন তা জানতে পেরে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে।