Sun Mercury Venus Ve Ves
বিশেষ খবর
‘লক্ষী’ থেকে লক্ষীপুর, যার আরেক নাম সয়াল্যান্ড  লক্ষীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা  ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ  আ’লীগ আবারও ভোট চুরির পরিকল্পনা করছে - লক্ষীপুরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে বাংলাদেশে দিবাস্বপ্ন দেখার কোনো কারণ নেই - লক্ষীপুরে মাহবুব উল আলম হানিফ 

রায়পুরে বিনোদন কেন্দ্র নেই, সিনেমা হলগুলো বন্ধ চায়ের দোকানগুলিই এখন মিনি সিনেমা হল

‘হেইযে পনর বছর আগে দল বাইন্দা হলে ছবি দেখতে যাইতাম, ভালা লাগতো, হাসি-আনন্দ করতাম। অন আর হেইদিন নাই। অন নইব্বার চা দোয়ানে দশ টিয়া দি চা খাইলেই একটা ছবি দেখতাম হারি। আঙ্গো ঘরে টেলিভিশন নাই, পরিবার নিয়া ঘোরারও জায়গা নাই। দুইহান ছিনেমা হল আছিলো, তাও অন বন্ধ অই গেছেগই’। চা দোহানের টেলিভিশনই অহন আমাগো বিনোদনের আড্ডাখানা’। আন্নেরা এগুন লিহি কি লাভ অইব? আঙ্গো কাছে আইছেন যহন এককাপ চা খাই যানগি।’ আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে কথাগুলো বললেন, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মিতালী বাজার এলাকার দিনমজুর হোসেন মিয়া। কথাগুলো হোসেন মিয়া বললেও এটিই এখন এখানকার অধিকাংশ সিনেমাপ্রেমী মানুষের মনের কথা।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ‘তাজমহল’ ও ‘বাঁশরী’ নামে দু’টি সিনেমা হল থাকলেও প্রায় ৭/৮ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এখানে নেই কোনো শিশুপার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র। দৃষ্টিনন্দন মরা ডাকাতিয়া নদী প্রাকৃতিক লেকের সৌন্দর্য ছড়ালেও তা দখলদাররা দিন দিন ভরাট করে জবরদখল করায় সেটিও এখন আগের স্থানে নেই। তাই বিনোদনপ্রেমী মানুষের এখন ভরসা স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি। আবার যাদের এ দু’টির সংশ্রব নেই, তারা ছুটে চলেছেন এলাকার চা দোকানগুলোতে। এক একটি চা দোকান এখন এক একটি মিনি সিনেমা হল।
প্রতিবছর বাজেট হলেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এতে হতাশ ও উদ্বিগ্ন রয়েছে বিনোদন পিপাসু মানুষ। জেলা শহরে রয়েছে একটি শিশুপার্ক ও দশটি সিনেমা হল। হ্যাপি ছাড়া অন্য ৯টি সিনেমা হলই বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শিশুপার্কে ঘুরতে আসা পাঁচ উপজেলার মানুষকে হতে হয় নানা বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার। সরজমিনে ও কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাতে জানা যায়, সদর উপজেলায় অবস্থিত হ্যাপি ছাড়া, ঝুমুর, চন্দ্রগঞ্জে সততা, রামগঞ্জ উপজেলায় জাবেদ, রায়পুর উপজেলায় তাজমহল ও বাশুরী, রামগতি উপজেলায় বর্ণালি, আলেকজেন্ডারে বাণী, কমল নগর উপজেলায় রীতা, হাজিরহাট এলাকায় মেঘনা নামে ১০টি সিনেমা হল প্রায় ৮-১৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
এসব সিনেমা হলে অশ্লীল ছবি প্রদর্শন, ফিল্ম মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়া, দর্শক কমে যাওয়া এবং বিরোধী দলীয় আন্দোলনের কারণে বন্ধ রয়েছে বলে দর্শকদের মতামত। পৌর শিশুপার্কে ঘুরতে আসা রায়পুরের দুই গৃহবধূ জানান, হলগুলোতে পরিবেশ না থাকায় ছবি দেখা হয় না। সাপ্তাহিক ছুটি ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের চাপে পড়ে ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সদরের এই শিশুপার্কে এসেছি। তাও আবার উপযুক্ত মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে আসলে নানা প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে ঘরে বসে স্যাটেলাইটে অনুষ্ঠান দেখি। প্রতিটি উপজেলায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ ও তার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাই।
এ প্রসঙ্গে হ্যাপী সিনেমা হলের মালিক মোজাম্মেল হায়দার মাছুম ভূঁইয়া বলেন, ১৯৮৬ সালে ৫০ শতাংশ জমির ওপর হলটি নির্মাণ করি। ভালো ছবি প্রদর্শন হলে প্রায় ১২০০ দর্শকের আগমন ঘটে। ফিল্ম মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায়, খরচ বেশি হওয়ায় এবং বিরোধীদলীয় আন্দোলনের কারণে সিনেমা হলের ধস নেমেছে। তাছাড়া ডিজিটাল নির্মাণে ব্যয় কমছে এবং সিনে কমপ্লেক্স পরিকল্পনায় আছেন বলে দাবি করেন তিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো বেশি বিনোদন সুবিধা দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
রায়পুরের পৌর মেয়র এবিএম জিলানি বলেন, ডাকাতিয়া নদী সংলগ্ন টিসি সড়কের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত ৩ একর জায়গায় শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য পঞ্চাশ লাখ টাকার আবেদন জমা দিয়েছি জেলা প্রশাসকের কাছে। আবেদনটি পাস হলে রায়পুরবাসীর জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি। সিনেমাহলগুলোতে ভালো পরিবেশ ও ছবি না থাকায় মানুষ এখন আর হলমুখী নেই। এখন বাসায় ও চায়ের দোকানগুলোতে বসে বিনোদন উপভোগ করে। ঠিক একই মন্তব্য করেছেন রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি পৌর সভার মেয়রগণ।
এ প্রসঙ্গে বন্ধ থাকা রায়পুর তাজমহল সিনেমা হলের মালিক হাজী ইসমাইল খোকন বলেন, ভালো ছবি নির্মাণ না হওয়ায় এবং অর্থ সংকটের কারণে হল বন্ধ করে দিয়েছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ও ভালো নির্মাণ হলে আবার হল চালু করতে পারি। একই কথা বললেন, বন্ধ থাকা অন্য ৮টি সিনেমা হলের মালিকগণ।
জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। চার উপজেলায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ ও সিনেমা হলগুলোর পরিবেশ দেখে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।