Sun Mercury Venus Ve Ves
বিশেষ খবর
‘লক্ষী’ থেকে লক্ষীপুর, যার আরেক নাম সয়াল্যান্ড  লক্ষীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা  ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ  আ’লীগ আবারও ভোট চুরির পরিকল্পনা করছে - লক্ষীপুরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে বাংলাদেশে দিবাস্বপ্ন দেখার কোনো কারণ নেই - লক্ষীপুরে মাহবুব উল আলম হানিফ 

জনসেবার জন্য প্রশাসন -এই ব্রতকে সামনে রেখে সরকারি সেবার মান বৃদ্ধিতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি - মোহাম্মদ নুরুজ্জামান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, লক্ষ্মীপুর সদর

মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে অবদান রাখায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৬ এ লক্ষ্মীপুর জেলার এবং চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদরের ইউএনও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।
মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে জোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, মাদকনিয়ন্ত্রণ, ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, দুর্নীতিমুক্ত অফিস প্রতিষ্ঠা, সরকারি জমি ও খাল থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, অবৈধভাবে ভূ-গর্ভস্থ বালি উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকান্ডে কঠোর ও উদ্যোগী ভূমিকা রেখে জনগণের মাঝে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।
সর্বোপরি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের চতুর্মুখী তৎপরতার কারণে লক্ষ্মীপুর সদরের শিক্ষাঙ্গনে ঝরেপড়া রোধসহ সর্বক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাপদক ২০১৬-এ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর বার্তা’র পক্ষ থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়। তাঁর এ সাফল্যের অনুভূতি জানতে লক্ষ্মীপুর বার্তা’র বৃহত্তর নোয়াখালীর বার্তা সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হলে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। তাঁদের আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে এখানে সন্নিবেশিত হলো।
লক্ষ্মীপুর জেলায় শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হওয়ায় অনুভূতি ব্যক্ত করে তারুণ্যদীপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমার কাজই হচ্ছে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা; মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখা; সেবাকে সহজ করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। আমি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই এসব কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার হার তুলনামূলক কম। তাই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। ফলশ্রুতিতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৬ উপলক্ষে আমাকে লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত করা হয়েছে। এজন্য আমি লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয় ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এতে আমার দায়িত্ব ও কর্মস্পৃহা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জন্য মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে আরো বেশি কাজ করার অনুপ্রেরণা তৈরি হয়েছে।
কার অনুপ্রেরণায় এবং কী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি জনসেবামূলক এ অফিসার পদে যোগদান করেছেন এমন জিজ্ঞাসার জবাবে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, আমার পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণায় আমি বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আমার আপ্রাণ প্রচেষ্টা আমাকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। তাই যতদিন চাকরিতে আছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাকে ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে দূরদর্শী ইউএনও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, লক্ষ্মীপুর সদর একটি বড় উপজেলা। এ উপজেলায় নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে উপজেলার বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত আমার সহকর্মীগণ, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ এবং সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণে কাজ করে যাচ্ছি। আমি এ উপজেলাকে বাংলাদেশের একটি মডেল উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এর ধারাবাহিকতায় মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে জোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, দুর্নীতিমুক্ত অফিস প্রতিষ্ঠা, সরকারি জমি ও খাল থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, অবৈধভাবে ভূ-গর্ভস্থ বালি উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতকরণে সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে যতদিন এই উপজেলায় নিয়োজিত থাকব, ততদিন সরকারের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং জনস্বার্থে কাজ করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
আপনি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দায়িত্ব গ্রহণের পর উপজেলা কার্যক্রমে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে আত্মবিশ্বাসী সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, আমি অত্র উপজেলায় যোগদানের পর হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা-সেক্টরে পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি মনে করি। লক্ষ্মীপুরের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় এ সময়ের মধ্যে আমি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাবাসীর সুখ-দুঃখে সঙ্গী হয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। যেমন মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন, মাদক বিরোধী অভিযান, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা আনয়ন, দুর্নীতিমুক্ত অফিস প্রতিষ্ঠা, সরকারি অফিসে সেবার মানবৃদ্ধি, ভেজাল বিরোধী অভিযান, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, সরকারি সম্পত্তি হতে অবৈধ দখলকার উচ্ছেদ, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও নাশকতার বিরুদ্ধে জনমত গঠন, সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করে জলাবদ্ধতা নিরসন, বাল্যবিবাহ রোধ, ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সর্বোপরি জনসেবার জন্য প্রশাসন এই ব্রতকে সামনে রেখে সরকারি সেবার মান বৃদ্ধিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, সেবা প্রার্থীদের মধ্যে সরকারি অফিসের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন এছাড়াও আরো অনেক কাজ করার ছিল, করতে পারিনি। লক্ষ্মীপুরবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে আগামীতে তা করতে চাই। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ১৯ দফা বাস্তবায়ন করতে চাই। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী প্রজম্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ গড়তে চাই । তিনি আরও বলেন আমি লক্ষ্মীপুরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ, আমার অনেক সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে আপনারা সকল ভালো কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সমর্থন আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং দায়িত্ববোধ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যতদিন থাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিশন ২০২১’ কে সামনে রেখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সাধারণ মানুষের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে চাই। একটি সুন্দর লক্ষ্মীপুর গঠনে আগামী দিনের প্রচেষ্টায় আমি সকলের দোয়াপ্রার্থী।
ছাত্র-যুব সমাজের বিপথগামিতা রোধে পরিবার বা সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে চৌকস নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ছাত্র ও যুব সমাজ হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে তাদের উপর অর্পিত হবে রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। আর তাদের সুন্দর ও সুষ্ঠু পথে চলার অনুপ্রেরণা হচ্ছেন পিতা-মাতা, পরিবার, শিক্ষক ও সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা। তাদের মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে ব্রতী হতে হবে এবং মাদক, সন্ত্রাস, অসৎ পথ থেকে বিরত থেকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।