মেধাবী ও চৌকস সচিব, ডায়নামিক ও কল্যাণকামী শিক্ষাদ্যোক্তা এ কে এম এনায়েত উল্লাহকে লক্ষ্মীপুর জেলার শীর্ষ সমাজসেবী সম্মাননা
বর্ণিল গুণাবলির কর্মযোগী, উদারপ্রাণ সমাজসেবী; আধুনিক ধ্যান-ধারণার মূর্ত প্রতীক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ। লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণকারী জনাব এনায়েত উল্লাহ পিতার চাকরিসূত্রে শৈশব থেকেই ঢাকায় অবস্থান করেন। কিন্তু নিজ জন্মস্থান ও পৈত্রিকনিবাস চাটখিলের প্রতি রয়েছে তাঁর গভীর মমত্ববোধ।
জনাব এনায়েত উল্লাহ ১৯৫২ সালে তৎকালীন ঢাকার স্বনামধন্য আরমানীটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন, যা তাঁর জীবনের এক বিরাট প্রাপ্তি ও গর্বের বিষয়। তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ১ম শ্রেণিতে ডিগ্রি লাভের পর সরকারি চাকরিতে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন; বিএডিসি’র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োজিত থাকাকালীন সময়ে নিখিল পাকিস্তান মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় কলম্বো প্লান স্কলারশিপ প্রাপ্ত হন এবং পিএইচডি অধ্যয়নের নিমিত্তে ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালের মার্চে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রারম্ভেই সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নির্দেশনায় সার্বক্ষণিক সংগ্রাম পরিষদের কাজে নিয়োজিত হন জনাব এনায়েত উল্লাহ। দীর্ঘ ৯ মাস ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসেবে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে ব্রাডফোর্ড ইউনিভার্সিটি হতে সিস্টেম কন্ট্রোল এন্ড ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর সরকার তাঁকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে জ্যেষ্ঠতা প্রদান করে উপসচিব নিয়োগ করে পিএইচডি অধ্যয়নের জন্য স্কলারশিপ অনুমোদন করেন। উপসচিব হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগের পর তিনি যান্ত্রিক চাষ ও সেচ প্রক্রিয়ায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেন এবং খাল খনন ও সেচ কর্মসূচির সদস্য-সচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে পানিসম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, ট্যারিফ কমিশনের সদস্য, বিসিএস একাডেমীর পরিচালক, বাংলাদেশ শিল্প-বিজ্ঞান ও শিল্প-গবেষণা পরিষদ এর সদস্য, স্থানীয় সরকার পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব/প্রকল্প পরিচালক ও হ্যান্ডলুম বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পরবর্তীতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
কর্মযোগী এ ব্যক্তিত্ব নিজ এলাকার সেবা ও জনকল্যাণমূলক উন্নয়ন কাজেও আজীবন ছিলেন উদার। তিনি দত্তপাড়া-দেলিয়াই সড়কের মূল স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার। এছাড়াও তিনি চৌপল্লী বাজার হতে উত্তর জয়পুর সড়কের সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। দীর্ঘ ২০ বৎসর যাবৎ তিনি তাঁর পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত চাটখিলের দক্ষিণ দেলিয়াই হাশেমিয়া মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, মাদ্রাসাটি জেলার অন্যতম সেরা মাদ্রাসা হিসাবে পরিচিত। তাঁর পিতা তাঁর সমস্ত সম্পত্তি মাদ্রাসায় দান করে যান।
শিক্ষানুরাগী জনাব এনায়েত উল্লাহ লাইসিয়াম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও লাইসিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। তিনি বুয়েট এলামনাই এর অন্যতম ট্রাস্টি। ঢাকা ইম্পিরিয়াল কলেজের প্রাক্তন সভাপতি ও শহীদ আনোয়ার কলেজ ও সেন্ট জোসেফ কলেজের পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য।
শিক্ষা-সমাজসেবা ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত এ কে এম এনায়েত উল্লাহ এর এরূপ প্রাগ্রসর ও প্রেরণাদায়ী কার্যক্রমকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে অনুকরণীয় ও স্মরণীয়-বরণীয় করতে লক্ষ্মীপুর বার্তা’র ৩০ বর্ষ উপলক্ষে তাঁকে অতল শ্রদ্ধা ও অসীম ভালোবাসায় লক্ষ্মীপুর বার্তা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শীর্ষ সমাজসেবী সম্মাননা জ্ঞাপন করছি। সেইসাথে তাঁর সুখ-সুস্বাস্থ্য ও অনন্ত সৃষ্টিশীল দীর্ঘজীবন কামনা করছি।