লক্ষ্মীপুরের সন্তান, নৌ-বাহিনীর প্রতিশ্রুতিশীল ক্যাডেট
জাহিদ মোহসীন কবিরের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক লাভ

লক্ষ্মীপুরের সন্তান জাহিদ মোহসীন কবির ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্তি এবং পেশাগত ও শিক্ষাগত বিষয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জন করে ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে তিনি এ পদক গ্রহণ করেন।
তিনি ২০১৪ সালের জাুনয়ারি মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মিডশিপম্যান পদে উন্নীত হন। বর্তমানে তিনি নৌ-বাহিনীর ঢাকা সদর দপ্তরে কর্মরত।
জাহিদ মোহসীন কবির ১৯৯৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার মজুপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এডভোকেট মোহসীন কবির, মাতা জহরত আরা কবির। তাঁরা ৩ ভাই; তাঁর এক ভাই জাইফ মোহাম্মদ কবির ব্যবসা করেন এবং আরেক ভাই জুবায়ের মোহসীন কবির ব্রাক-ইপিএল এ কর্মরত।
তাঁর দাদা মরহুম এডভোকেট ফজলুল করিম। মাতামহ প্রখ্যাত রাজনীতিক মরহুম এডভোকেট আবদুল হাকিম এমএলএ; যিনি ১৯৪৬-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত আইন পরিষদের সদস্য (এমএলএ) ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
জাহিদ মোহসীন কবির ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন।
জাহিদ মোহসীন কবির ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। তাঁর ব্যক্তিগত শখ হলো ভ্রমণ, শুটিং, গিটার বাজানো।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক প্রাপ্তিতে অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত করে জাহিদ মোহসীন কবির বলেন সামরিক প্রশিক্ষণ মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। প্রশিক্ষণকালীন সময়ে সকল বিষয়ের ফলাফল ও নেতৃত্বের গুণাবলির উপর ভিত্তি করে মেধাস্থান নির্ধারণ করা হয়। মহান আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে এ পদকটি অর্জন করতে পেরে আমি আনন্দিত এবং নিজকে গর্বিত মনে করছি। তবে এমন একটি অর্জন দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার দায়িত্ববোধ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, যা কোনো অংশে কম আনন্দদায়ক নয়।
তিনি বলেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমি আমার বাবা-মা’র অবদানকে সবার প্রথমে স্মরণ করি। আমাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদের ত্যাগ ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা আমি সবসময় সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি। তবে জীবনে চলার পথে সাহস ও অনুপ্রেরণা হিসেবে যে ব্যক্তিটি সর্বদা আমার পাশে ছিলেন, তিনি আমার খালা রোক্সানা চৌধুরী। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে তাঁর অবদান আমি এই স্বল্প পরিসরে বলে শেষ করতে পারব না। এছাড়া আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও বন্ধু-বান্ধব সবার অবদান আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
জাহিদ মোহসীন কবির বলেন, আমি লক্ষ্মীপুর জেলার সন্তান হিসেবে নিজকে গর্বিত মনে করি। মহান আল্লাহ তা’আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করতে পেরে। লক্ষ্মীপুরের রূপ-রস-গন্ধ সর্বদাই আমাকে আকৃষ্ট করে এবং সময় পেলেই আমি ছুটে যাই সেখানে। আমি বিশ্বাস করি, লক্ষ্মীপুর একটি অপার সম্ভাবনাময় জেলা এবং তার উন্নয়নের যেকোনো বিষয়ে অংশীদার হতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
পিতা-মাতার অনুভূতি
জাহিদ মোহসীন কবিরের সাফল্যে তাঁর পিতা-মাতা গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। নিম্নে তাঁদের অনুভূতি তুলে ধরা হলো।
জাহিদ মোহসীন কবিরের পিতা এডভোকেট মোহসীন কবির বলেন, আমাদের কনিষ্ঠ পুত্র জাহিদ মোহসীন কবির এর সাফল্যে আমরা গর্বিত। সে যে দায়িত্ব পেয়েছে, তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ; যা দেশরক্ষা, দেশের উন্নয়ন, জাতির কল্যাণের সাথে জড়িত। সে যেন এ গুরুদায়িত্ব নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে পালন করতে পারে, এজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছি।
এডভোকেট মোহসীন কবির বলেন, দেশসেবার লক্ষ্যে আমি তাকে নৌ-বাহিনীতে পাঠিয়েছি। দেশের সমুদ্র-উপকূল তথা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে যাতে সে ভূমিকা রাখতে পারে, দেশের সন্তান হিসেবে মাতৃভূমির সেবায় অবদান রাখতে পারে, সেজন্য তাকে নৌ-বাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছি। কর্মজীবনের সবগুলো ধাপে বাহিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুসরণ করে সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে সে যেন দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে সে কামনাই আমরা করি। তাকে ঘিরে এটিই আমাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন; দেশও তার কাছে সেই ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
তিনি বলেন জাহিদ মোহসীন কবির শৈশব-কৈশোরে অনেক মেধার পরিচয় দিয়েছে। আমরা তার সম্পর্কে অনেক আশাবাদী ছিলাম। শৈশবে সে পড়ালেখায় একনিষ্ঠ ছিল। সাংস্কৃতিক ব্যাপারে তার উৎসাহ ছিল, গিটার বাজানোতে ছিল তার প্রবল আগ্রহ।
এডভোকেট মোহসীন কবির বলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে বাবা-মা’র ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান যাতে অপরাধের সাথে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তারা যেন পড়ার টেবিলে থাকে, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে সেদিকে তাদেরকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এভাবে তাদেরকে অপরাধের পথ থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন।
জাহিদ মোহসীন কবিরের মা মিসেস জহরত আরা ছেলের স্বর্ণপদক প্রাপ্তিতে অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন সন্তানের সাফল্যে সব মা-ই গর্ব অনুভব করে। আমি আমার সন্তান জাহিদ মোহসীন কবিরের সাফল্যে কতটুকু আনন্দিত হয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
জহরত আরা বলেন আমাদের ইচ্ছা ছিল, জাহিদ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করে আর্কিটেক্ট হোক। কিন্তু সে নৌ-বাহিনীতে যোগদান পছন্দ করল। আমরা তার ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাইনি, তার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমি সবসময় দোয়া করি, সে যেন সফলভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে।
তিনি বলেন আমি চাই আমাদের ছেলে যেন একজন সৎ, কর্মনিষ্ঠ, দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে কর্তব্য সম্পাদন করে সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারে পরম করুণাময়ের কাছে এই প্রার্থনা করি। সে যেন বাপ-মা’র সম্মান রক্ষা, দেশের সুনাম বৃদ্ধি করতে পারে; এজন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
জহরত আরা বলেন জাহিদ লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহশীল ছিল। আমাদের কথামতো চলত। তখনই আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ভবিষ্যতে সে সফল জীবনের অধিকারী হবে। সে গিটার বাজাতে পছন্দ করত। নির্দিষ্ট পড়া শেষ করে তারপর অন্যদিকে মন দিত। তাকে নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হতো না। আমরা বরাবরই তার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। সে শুধু আমাদের পরিবারের নয়, দেশেরও মুখ উজ্জ্বল করবে এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী।