Sun Mercury Venus Ve Ves
বিশেষ খবর
‘লক্ষী’ থেকে লক্ষীপুর, যার আরেক নাম সয়াল্যান্ড  লক্ষীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা  ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ  আ’লীগ আবারও ভোট চুরির পরিকল্পনা করছে - লক্ষীপুরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে বাংলাদেশে দিবাস্বপ্ন দেখার কোনো কারণ নেই - লক্ষীপুরে মাহবুব উল আলম হানিফ 

ফেনীর ঐতিহ্য রাজাঝির দীঘি

রাজাঝির দীঘি বা রাজনন্দিনীর দীঘি ফেনীর একটি ঐতিহ্যবাহী দীঘি। ফেনী জেলার জিরো পয়েন্টে ফেনী রোড ও ফেনী ট্রাংক রোডের সংযোগ স্থলে এর অবস্থান। জনশ্রুতি আছে ত্রিপুরা মহারাজের একজন রাজার কন্যার অন্ধত্ব দূর করার মানসে এ দীঘি খনন করা হয়। স্থানীয় ভাষায় কন্যা-কে ঝি বলা হয়। তাই দীঘিটির নামকরণ করা হয় ‘রাজাঝির দীঘি’।

১৮৭৫ সালে ফেনী মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার সদর দপ্তর গড়ে তোলা হয় এই দীঘির পাড়ে। এখন দীঘির পাড়ে ফেনী সদর থানা, ফেনী কোর্ট মসজিদ, অফিসার্স ক্লাব, ফেনী রিপোর্টাস ক্লাব, জেলা পরিষদ পরিচালিত শিশু পার্কসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছে। এ দীঘিটি ফেনীর শতবর্ষের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের একটি। শতবছরে দীঘির স্বচ্ছ জলের এই দীঘির রূপ-সৌন্দর্য্য আজও কিছুটা ধরে রেখেছে। কিছুদিন আগে ময়লা-আবর্জনা পড়ে ও দীঘির চারপাশে দোকান বসে দীঘির সৌন্দর্য্য হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে দীঘির ঐতিহ্য ও রুপ ধরে রাখার জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ ও ফেনী পৌরসভা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেন ফেনী সদর এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।

ফেনী পৌরসভা দীঘির তিনদিকে উত্তর-দক্ষিণ- পূর্ব পাশে দেওয়াল নির্মাণ করেছে। পশ্চিম পাশে এখনও পুরাতন ভাঙা গাড় দেখা যায়। দর্শানার্থীর বসার জন্য পূর্ব-দক্ষিণ পাশে গাড়ের উপর পাকা সিঁড়ি বানানো হয়েছে। চলাচলের জন্য দীঘির দুইপাশ (উত্তর ও পশ্চিম) কিছুটা উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাকি দুইপাশে হকারদের দোকান বসে। এতে দীঘির সৌন্দর্য কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে দীঘির জল যাতে সবাই স্পর্শ করতে পারে, সেইজন্য তিন পাশে পাঁচটি সিঁড়ির নির্মাণ করা হয়েছে। দীঘিতে ময়লা আবর্জনা যাতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে গড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য চারপাশ উঁচু করা হয়েছে। বর্তমানে দীঘির পানি পানের ও ব্যবহারের উপযোগী।

দীঘিটি প্রায় ১০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ফেনী জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, প্রায় দেড়শ বছর আগে এ দীঘির পাড়ে গড়ে ওঠা প্রশাসনিক কার্যালয়গুলো ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলা হওয়ার পর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে কিছু ভবন এখন পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে।

ফেনীর স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, দীঘির চারপাড় ঘিরে এক সময় মজবুত দেওয়াল ছিল। কিছুদিন আগে দেওয়ালগুলো মেরামত করা হয়। দীঘির পাড়ে প্রত্যেকদিন সব বয়সের মানুষ আসেন। ফেনী শহরের মধ্যে এরকম আর কোন দর্শনীয় জায়গায় নেই।

ঘুরতে আসা প্রবীণ দর্শনার্থী জানান, অনেক আগে দীঘির চারপাশে ছিল বহু নারিকেলগাছ। তবে এখন কিছু গাছ আছে। আমরা জানতে পারলাম প্রশাসন উদ্যোগে নিয়েছে দীঘির সৌন্দর্য্য বাড়ানোর।

ফেনী জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজ আহম্মদ চৌধুরী জানান, রাজাঝির দীঘি ফেনীর ঐতিহ্য। এ দীঘির সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জন্য ফেনী পৌরসভা কাজ শুরু করছে। ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গীটার জানান, দীঘির সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জন্য পৌরসভা ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। দীঘির চারপাশে দেয়াল, সিঁড়ি ও ফুল বাগান তৈরি করা হবে। এ কাজ পুরোপুরি শেষ হলে দীঘির হারানো সৌন্দর্য্য কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে।